গোলামের বিবি সাহেবের টেক্কা – Akkhor.xyz

ঋজু গাঙ্গুলির রিভিউ –

আপনি কি থ্রিলার ভালোবাসেন?
ধরুন, সেই থ্রিলারটি একান্ত বাস্তব চরিত্র, ঘটনা ও পটভূমি নিয়েই লেখা। এও ধরুন যে সেই কাহিনির অন্তিম ফলাফল আপনার-আমার ইতিহাস ও ভূগোলকেই বদলে দিয়েছে ও দিচ্ছে।
পড়বেন এমন লেখা?
তাহলে অবিলম্বে এই ছোট্ট বইটিকে সংগ্রহ করুন ও পড়ুন।
আধুনিক ভারতের রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করা সহজ নয়। লেখক তো বটেই, এমনকি পাঠকও তীব্র আমরা-ওরা বিভাজন মনে পুষে তেমন কাজকে দেখেন। এই পরিস্থিতিতে অভীক মুখোপাধ্যায় ভারতের রাজনীতির এমন চারটি চরিত্রকে নিয়ে লিখেছেন, যাঁদের ক্ষমতার অলিন্দে থাকা সবাই এড়িয়ে চলেন। সেই এড়িয়ে চলার কারণ কারও ক্ষেত্রে আনুগত্য প্রদর্শন, আবার কারও ক্ষেত্রে তা স্রেফ বিবাদ এড়িয়ে চলার বাসনা।
অভীক ও-সবের ধার ধারেন না বলেই বোধহয় এঁদের এড়িয়ে যাননি। আর বেংগল ট্রয়কা-র তরফে নীলাদ্রি রীতিমতো দুঃসাহসের সঙ্গে সেটিকে বই আকারে প্রকাশও করে ফেলেছেন।
প্রকাশকের তরফে একটি অকপট ‘ভূমিকা’-র পর এই বইয়ে আছে~
১. নারায়ণ… নারায়ণ…
২. নাম কামরাজ
৩. ম্যাডাম
৪. ময়ূর বিহার থেকে জেল তিহার
নাম থেকে হয়তো আন্দাজ করতে পারবেন, এই অধায়গুলো কাদের নিয়ে লেখা হয়েছে। তবে সেই আন্দাজ ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর; কারণ আসলে এদের কেন্দ্রে রয়েছে একটিই চরিত্র।
সময়!
আর তার চরণধ্বনি গুঞ্জরিত হয়েছে এ-দেশের ধনী থেকে গরিব, প্রতাপান্বিত থেকে সর্বহারা— সবার মনে, সবার প্রাণে।
অভীক সেই চরিত্রটিকে তুলে ধরেছেন একেবারে নির্মোহ ভঙ্গিতে, কারও পক্ষ না নিয়ে, কাউকে অসম্মান না করে। এ যে কী কঠিন কাজ, তা আমরা সবাই বুঝি। আর সেখানেই এই বইয়ের সার্থকতা।
ভারতের রাজনীতি এবং সময়কে বুঝতে চাইলে এই ছোট্ট বইটি পড়ুন। হয়তো এর অনেক কিছুই আপনার জানা। হয়তো এর কিছুই আপনার জানা নয়। কিন্তু সেই জানা আর অজানা মিশিয়ে এই বই একেবারে অনন্য ভঙ্গিতে আমাদের বলে, সময়ের চেয়ে বলবান আর কেউ হয় না, হতে পারে না!
আর হ্যাঁ, খাঁটি থ্রিলারের মতো করেই এই বইয়ের চারটি আখ্যানই শেষ হয়েও শেষ হয়নি; বরং সময়ের পরবর্তী আখ্যান আমাদের সামনে বিধৃত হওয়ার ভূমি প্রস্তুত করেই তারা থেমে গেছে।
অপেক্ষায় রইলাম তাদের জন্য। ইতিমধ্যে, এমন একটি ছোট্ট, সুমুদ্রিত, ধারালো এবং প্রায় বৈপ্লবিক বই উপহার দেওয়ার জন্য লেখক ও প্রকাশককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।