ঋজু গাঙ্গুলির রিভিউ –
কয়েক বছর আগে বাংলা সাহিত্যে একটা ছোটোখাটো বিস্ফোরণের মতো করেই দেখা দিয়েছিল মৈ মৈত্রেয়ী’র লেখা “আইহোল।” মনগড়া অলৌকিক লেখা পড়েও যাঁদের ঠিক তৃপ্তি হচ্ছিল না, তাঁরাই নড়েচড়ে বসেছিলেন সেই প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা পড়তে গিয়ে। যুক্তি ও বিশ্বাসের খাঁচাটা যেন কেউ বলিষ্ঠ হাতে সজোরে ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল।
এই বইয়ে সেই লেখকই ফিরে এলেন আরও ক’টি ব্যক্তিগত অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতা নিয়ে।
‘ভূমিকা’ অংশের পর এতে আছে~
১) বেনারস
২) কান্না এবং মৃত্যু ১
৩) চোখ
৪) পর্দার আড়ালে
৫) অদৃশ্য কেউ
৬) অভিশপ্ত হাইওয়ে
৭) কান্না এবং মৃত্যু
যেহেতু এগুলো ফিকশন নয়, তাই এতে বর্ণিত ঘটনাক্রম নিয়ে কিছু বলা কঠিন। বাস্তবে সবকিছু যে ঠিক সাজানো-গোছানো গল্পের মতো করে হয় না— তা আমরা জানি। তবু লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হল, এদের কিছুটা সম্পাদিত আকারে পরিবেশন করা প্রয়োজন ছিল। তা না হওয়ার ফলে একদিকে যেমন ‘ভূমিকা’ অংশে প্রচুর অপ্রাসঙ্গিক ও ভুল কথা এসেছে, তেমনই সম্পূর্ণ বইটি ‘সাথে’-জাতীয় অপ্রমিত শব্দে প্লাবিত হয়েছে।
লেখাগুলোকে স্বচ্ছন্দে, এমনকি ঘরোয়া আড্ডায় বলার মতো করেই, আরও টাইট করে দেওয়া যেত সেভাবে। না হলে কাল্পনিক অলৌকিক কাহিনির সামনে এদের আবেদন কমে যেতে বাধ্য।
তবে হ্যাঁ, অনাবশ্যক কথা ও বর্ণনার স্তূপ সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারলে এই গল্পগুলো তাদের অনুচ্চ হিংস্রতা আর ভীষণ চেনা চরিত্রদের দিয়ে কাঁপিয়ে দেবে। আলো-জ্বলা হই-হই করা শহর ম্লান হয়ে ঘনাবে নিবিড়, নির্মম অন্ধকার।
আর সেই মুহূর্তে আপনারা বুঝবেন, জটায়ু ভুল বলেননি। ট্রুথ ইজ ইন্ডিড স্ট্রংগার দ্যান ফিকশন!
ছোট্ট বইটিতে অলংকরণ পেলাম না বলে ক্ষুণ্ণ হলাম। ছাপা আর লে-আউট ভালো হলেও ‘ভূমিকা’ অংশটি প্রুফরিডারের কল্যাণস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ইনফ্যাক্ট, ওই ‘ভূমিকা’ অংশটি বাদ দিয়ে পড়লেই মঙ্গল— ওটি বইয়ের অভিঘাত কমিয়ে দিয়েছে নানা কথায়।
‘সত্যি হলেও গল্প’ পড়তে চাইলে এই বইটিকে উপেক্ষা করবেন না। সাবধানে পড়বেন। কাঁটা বাছার মতো করে হাবিজাবি বাদ দিয়ে পড়বেন।
ভয় পাবেন!
Reviews
There are no reviews yet.