খাবার নিয়ে কিছু একটা করলে কেমন হয়? কথাটা মীর আফসার আলীর মাথায় অনেকদিন ধরেই ঘুরছিল। রেডিয়োর জগতে কালপুরুষ, অভিনেতা, নিজস্ব ব্যান্ডে লিড-সিঙ্গার … বহু পরিচয় তাঁর। কিন্তু তারপরেও কিছু যেন একটা বাকি ছিল। আসলে শুধুমাত্র খাবার নিয়ে খাদ্যরসিকদের জন্য অনুষ্ঠান বাংলায় বড়োই বিরল। তা, মাথায় যখন এসেছে, শুধুমাত্র বসে থাকার মানুষ তিনি নন। তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু হলেন সুনন্দ ব্যানার্জী, বহুজাতিক সংস্থায় দায়িত্বপূর্ণ পদ সামলানোর পাশাপাশি তিনি সামলান কলকাতার অগ্রগণ্য বিরিয়ানির রেস্তরাঁ। কিন্তু সমস্যা হল, খাবারের গল্পটা বলবে কে? অনুষ্ঠানের নাম ততদিনে ভাবা হয়ে গেছে— ফুডকা। যেমন মেজকা, সেজকা হন— ফুডের জগতে সবজান্তা এই অনুষ্ঠানের নাম ফুডকা। কিন্তু ফুডকা কে হবে? মীরের সঙ্গে আমার পরিচয় একটি কাগজের দ্বারা আয়োজিত ফুডট্রেলে। তা খাবার নিয়ে পাগলামি আমার বহুদিন— www .moha -mushkil .com ব্লগে লেখা আমার বেশ কয়েক বছর হয়েও গেল। চেহারাটাও ষাটের কৃপায় বেশ ভারিক্কি গোছের, ব্যস— একদিন সকালে একটি ফোন (সেই পরিচিত সকলম্যানের—‘আপনি কি খাবার নিয়ে আমার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক?’ ‘পাগলা খাবি কি? না আঁচাব কোথায়?’ এ সুযোগ কেউ ছাড়ে? ব্যস, শুরু হয়ে গেল ফুডকার ব্লগ-বকানি।
কলকাতা খাবারের স্বর্গরাজ্য। খাদ্যজগতের রথী মহারথীরা অধিষ্ঠিত এখানে। পথেঘাটে মণিমাণিক্য ছড়িয়ে। তা, প্রথম দফায় ঠিক হয়েছিল কলকাতার সেই খাবারগুলোকে নিয়ে কাজ করা হবে। চালাও পানসি মাঝদরিয়া। প্রথম এপিসোড হল কলকাতার খাবারের যুবরাজকে নিয়ে— কাঠি রোল। তার ইতিহাস থেকে শুরু করে ভূগোল। মানে গল্প থেকে বিভিন্ন দোকান ঘোরা, খেয়ে বেড়ানো। মীর ভাইপো, যে সিনেমায় রোল পায়নি, তাই তার ফুডকা তাকে খাবারের রোল দেখাতে নিয়ে বেরোল। সেই যে ঘোরা শুরু হল— তা চলতেই থাকল। আজও তা চলছে। বিরিয়ানি, কলকাতার মিষ্টি, ক্রিসমাসের সময় ছোটো বড়ো মেজো সেজো খাবারের আড্ডা, লুকোনো মণিমাণিক্য— কাকা-ভাইপোর যুগলবন্দি আজও চলছে।
দ্বিতীয় সিজন আবার শুরু হল একটু অন্যভাবে। এতকাল কাকা ভাইপো খেয়ে বেড়াত বিভিন্ন রেস্তরাঁতে। এবার তারা নেমে গেল রাস্তায়। পবিত্র ইদের মরশুমে জাকারিয়া স্ট্রিটে বসে হরেকরকম খাবারের পসরা। মাংস, কাবাব, মিষ্টি, হালুয়া— সে এক যাকে বলে দারুণ ব্যাপার। তার পরের এপিসোড এল কলকাতার স্ট্রিটফুডের আরেক পীঠস্থানকে নিয়ে— ডেকার্স লেন। আমেরিকান কনসুলেটের সঙ্গে সে-যাত্রা চলল ডেকার্স লেনের অলিগলিতে— চলল হরেক খাবারের হালহদিশ।
সিজন ৩ শুরু হল বাঙালির আদি অকৃত্রিম ফুচকা দিয়ে। হ্যাঁ, সেই বস্তু, যা খেয়ে চোখের জলে নাকের জলে না হলে আমরা বেঁচে থাকার আনন্দটাই বুঝতে পারি না। তারপর একটু অন্যরকম কেকের গল্প। সেখান থেকে চলে আসা একদম নতুন কলকাতায়। পুরোনো কলকাতার খাবারদাবার তো অনেক দেখানো হল। কিন্তু শহরটা তো রোজ বেড়ে চলেছে, তাই এবার ফুডকার যাত্রা নিউটাউনে। পরের সিজনে দেখা যাক কোনদিকে যাওয়া যায়।
এর মধ্যে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এর দর্শক আসছেন প্রায় ৩৫ টি দেশ থেকে— পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লোকে ভালোবাসা জানাচ্ছে রোজ— আমাদের ফুডকার পরিবার রোজ বেড়ে চলেছে Foodka series নামে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে। আসলে সবাই হয়তো অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলেন খাবার সংক্রান্ত এরকম কোনো গল্পমালার— সঙ্গে মীর আফসার আলীকে নতুনরূপে চেনার তাগিদ তো ছিলই। সেই শূন্যস্থানেই আমাদের এই পথচলা শুরু। চেষ্টা তো চলছেই, তবে এখনও অনেক পথ চলা বাকি। পৃথিবীর তো ছাড়ুন— ভারতের বহু বহু লুকোনো খাবার খুঁজে বের করার, তাদের নিয়ে গল্প বলার দায়িত্ব এসে পড়ছে আমাদের ওপর— চাপ বাড়ছে রোজই। ডাক পড়লে যেকোনো জায়গাতেই, যেকোনো শহরে, যেকোনো দেশে চলে যেতে রাজি এই কাকা ভাইপোর জুটি। একটাই লক্ষ্য— খাবারের পেছনের গল্প নিয়ে পৃথিবীকে একসূত্রে বাঁধা— আনন্দ দেওয়া। ফুডকার যাত্রা চলছে, চলবে।
Reviews
There are no reviews yet.