খবরের কাগজগুলো প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অবনীদাদুর কেসটা ফলো আপ করেছিল। দু একটা খবরের কাগজে আবার জাদুকর অবনী দত্তের বিস্তারিত জীবনীও দেওয়া হয়েছিল। তাতে তাঁর দেশ বিদেশে পাওয়া নানা পুরস্কারের কথা, বিভিন্ন জাদুর খেলায় তাঁর হাতযশের কথা লেখা আছে। তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার — জীবনের শেষ এক সপ্তাহের শো’তে তিনি সম্পূর্ণ নতুন একটা খেলা দেখিয়েছিলেন। এইরকম খেলা তিনি তো বটেই, তার আগেও কেউ কখনও দেখাননি। তাঁর নিজের গ্রুপের লোকেরাও এতে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। স্টেজে ওঠার আগে পর্যন্তও কেউ জানতেন না অবনীদাদু এমন কোনও খেলা দেখাতে চলেছেন।
ভেন্ট্রিলোকুইস্টরা যে ধরনের পুতুল নিয়ে খেলা দেখান, সেরকম কয়েকটি পুতুল নিয়েই হত এই খেলা। কিন্তু এতে গলার ভেতরে শব্দ করে পুতুলের মুখে কথা বসানো হত না। বরং পুতুলগুলো এক জায়গায় বসে যা নির্দেশ দিত, জাদুকর নাকি তাই করতেন। প্রত্যেক পুতুলের হাতে থাকত কাগজ কলম। দর্শকের চোখের সামনে তাতে এক-একবার এক-একরকম নির্দেশ আসত। প্রতিবারই শেষ নির্দেশে লেখা থাকত ‘ক্ষমা চাও।’ সবাই স্তম্ভিত হয়ে দেখত, প্রখ্যাত জাদুকর এ.সি.জি হাঁটু গেড়ে মঞ্চের মাঝখানে বসে কাঁদতে-কাঁদতে ক্ষমাপ্রার্থনা করছেন। দর্শক তাজ্জব বনে যেত জাদুকরের অসাধারণ অভিনয় গুণে। সবচেয়ে আশ্চর্য হল, এই খেলা দেখানোর সময় অবনীদাদু গ্রুপের কোনও লোকের সাহায্য নিতেন না।
অবনীদাদু মারা যাওয়ার পর এই পুতুলগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বন্ধ গ্রিনরুম থেকে সেগুলো কোথায় উধাও হল, সেটা নিয়ে পুলিশ যদিও মাথা ঘামায়নি বিশেষ। আর একটা ব্যাপারের কথা কোনো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিলেন। মৃত্যুর সময়ে অবনীদাদুর মুখে ছিল একটা স্থির, নিষ্প্রাণ হাসি— ঠিক যেমনটি ঐ পুতুলগুলোর মুখে ছিল। তবে অনেকে একে গুজব বলেও উড়িয়ে দিয়েছেন। অবনীদাদুর মৃত্যু স্বাভাবিক বলে ঘোষিত হওয়ার পরই এই কেসের ফাইল বন্ধ হয়ে যায়।
আমি বেশ খানিকক্ষণ গুম হয়ে বসে রইলাম। ব্যাপারটা খুবই রহস্যময়। কেউ ক’টা পুতুল কেন চুরি করতে যাবে? ওগুলো নিয়ে হবেই বা কী? অবনীদাদুই বা শেষ বয়সে এসে এরকম একটা অদ্ভুত খেলা দেখাতে কেন শুরু করলেন?
Author
অমৃতা কোনার, ইপ্সিতা মজুমদার, বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দী
Reviews
There are no reviews yet.